আমার কাগজ ডেস্ক
অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ২৩ নাবিকসহ সোমালিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি জাহাজটি থেকে জিম্মি নাবিকরা বাঁচার আকুতি জানিয়ে অডিও বার্তা দিয়েছেন।
জানা যায়, জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই জলদস্যুরা সেটিকে সোমালিয়ার উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার বন্দরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির এক নাবিক।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর অন্তত ১০০ জলদস্যু জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বর্তমানে ২৩ নাবিককে কেবিনে রাখা হয়েছে।
অডিও বার্তায় জাহাজে থাকা এক নাবিক জানান, প্রায় শতাধিক জলদস্যু ছোট ছোট বোটে করে প্রথমে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা সশস্ত্র অবস্থায় জাহাজে উঠে এর নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে জলদস্যুরা কোনো নাবিকের ওপর হামলা চালায়নি।
এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজটি এস আর শিপিংয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছিল। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাই আসছিল পণ্যবাহী জাহাজটি। মালিকপক্ষ জিম্মি ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরেই সোমালীয় জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের এমভি জাহানমণি নামে অন্য একটি জাহাজ। জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রেখেছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
এদিকে এখনও জাহাজটির ছিনতাইকারী জলদস্যুদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা যায়নি বলে গণমাধ্যমগুলোকে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে করে জিম্মি নাবিকদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
জিম্মিদের স্বজনদের বরাতে জানা গেছে, বাংলাদেশের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে জিম্মি হলেও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই জাহাজে থাকা নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। ৬টার পর সবার মোবাইল কেড়ে নেয় জলদস্যুরা। এরপর থেকে তারা আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বলেও জানান জিম্মিদের স্বজনরা।
জাহাজের চিফ অফিসার মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ খান চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। তার পরিবারের সদস্যরা থাকেন চট্টগ্রামের নন্দনকানন এলাকার একটি বাসায়। এর মধ্যে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
আতিকুল্লাহ খানের মা শাহনূর বেগম বলেন, আমার ছেলের ছোট ছোট তিনটি বাচ্চা। বউটা গর্ভবতী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন তিনি যেন আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে উদ্ধারে ব্যবস্থা নেন।
আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আবদুল্লাহ খান আসিফ জানান, বিকাল ৩টার দিকে তারা জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন। শুনেই তারা কেএসআরএমের অফিসে ছুটে যান। কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বাস দিয়েছেন নাবিকদের উদ্ধারে সব রকমের ব্যবস্থা নেয়ার। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আতিকুল্লাহ খানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাদের। ৬টার দিকে একটি ভয়েস মেসেজে তিনি জানিয়েছেন, তাদের থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর পর থেকে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জাহাজটিতে থাকে ২৩ নাবিকের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের। বাকিরা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। জিম্মি নাবিকদের স্বজনদের বুধবার (১৩ মার্চ) কার্যালয়ে ডেকেছে কেএসআরএম।
সামশুদ্দিন মোহাম্মদ নামে আরেক নাবিকের এক বন্ধু জানিয়েছেন, তাদের সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো মুক্তিপণ চাইবে। শুনেছি তারা হুমকি দিয়েছে দ্রুত মুক্তিপণ না দিলে নাবিকদের হত্যা করার। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে যাচ্ছিল। পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটি এখন জলদস্যুদের হাতে রয়েছে। জাহাজে রয়েছেন আমাদের ২৩ জন ক্রু। আমরা যত দূর জেনেছি, এখনও ক্রুদের কেবিনে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। মালিকপক্ষ জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছে।