চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
এমআরআই মেশিন মেরামতের ফাইল সচিবের টেবিলে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় চার বছর হচ্ছে মেশিনটি অচল রয়েছে। কার্ডিওলজি বিভাগের একটি ক্যাথল্যাব মেশিনও প্রায় তিন বছর যাবত অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব মেশিন অচল থাকায় দরিদ্র রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নানা শর্তের মধ্যে এসব মেশিনের মেরামত কাজ আটকে রয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এমআরআই মেশিন মেরামত প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়েছে। কার্ডিওলজি বিভাগে অন্য একটি ক্যাথল্যাব মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। পুরোনোটি অচল থাকা ক্যাথল্যাব মেশিন মেরামত নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে না।
চিকিত্সকদের অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে ভারী চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় নীতিমালায় দুর্বলতার কারণে পরবর্তী সময়ে মেরামত প্রক্রিয়া নিয়ে নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ১৫-২০ কোটি টাকা মূল্যের এসব মেশিন মাত্র তিন-চার বছরের ওয়ারেন্টি সার্ভিস মেয়াদ থাকে। ফলে পরবর্তীকালে ত্রুটি দেখা দিলে মেরামতের জন্য ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের হয়রানির শিকার হতে হয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। অথচ বেসরকারিতে এসব একটি মেশিনের ওয়ারেন্টি ৮-১০ বছর হয়ে থাকে।
বর্তমানে অচল থাকা এমআরআই মেশিনটি চমেক হাসপাতালের জন্য মন্ত্রণালয় প্রায় ১০ কোটি টাকায় কিনেছিল গত ২০১৬ । ২০১৭ সালে মেশিনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ১০ কোটি টাকার মেশিনটির ওয়ারেন্টি ছিল মাত্র তিন বছর। যদিও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের একটি মেশিনের ৮ থেকে ১০ বছরের ওয়ারেন্টি থাকে। কিন্তু চমেক হাসপাতালের মেশিনটি তিন বছর শেষ না হতেই নানা যান্ত্রিকত্রুটি দেখা দেয়। এর পর থেকে চমেক হাসপাতালে এমআরআই মেশিনটির সেবা নিয়ে রোগীদের চলছে হয়রানি। গত ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মেশিনটি মেরামতের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেরামতে শর্ত হিসেবে আগে সিএমসি দাবি করছে।
এছাড়া চমেক হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের দুটি ক্যাথল্যাব মেশিনের মধ্যে একটি গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে তিন বছর যাবত অচল অবস্থায় রয়েছে। এই মেশিনে হৃদরোগীদের এনজিওগ্রাম করা হয়। গত ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ক্যাথল্যাব মেশিনটি বসানো হয়েছে। এটি মেরামত করতে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা খরচ হবে বলে সংশ্লিস্টরা জানান। এর পর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিনটি মেরামতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এখন এটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারছে না।
চমেক হাসপাতালে কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে বর্তমানে একটি ক্যাথল্যাব মেশিন চালু রয়েছে। চিকিৎসকদের দাবি সপ্তাহে ছয় দিন রোগীর এনজিওগ্রাম করা হচ্ছে। তারপর সিরিয়াল পেতে ১৫ থেকে ২০ দিন লেগে যায়। সরকারি এই হাসপাতালে একটি এনজিওগ্রাম করতে রোগীর ওষুধ খরচসহ প্রায় চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করতে গেলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
অন্যদিকে চমেক হাসপাতালে একটি মাত্র সিটিস্ক্যান মেশিন রয়েছে। একটি মেশিনের মাধ্যমে রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সিরিয়াল পেথে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান আরেকটি সিটিস্ক্যান মেশিন খুবই প্রয়োজন। কারণ একটি পুরোনো হয়ে গেছে। অচল হয়ে পড়লে রোগীদের সেবাবঞ্চিত হতে হবে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন বলেন, অচল থাকা এমআরআই মেশিনটি মেরামতে ৬-৭ কোটি টাকা খরচ হবে। এ ব্যাপারে অর্থ অনুমোদনের জন্য ফাইল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের টেবিলে রয়েছে। আর কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে আরেকটি ক্যাথল্যাব বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। পুরোনোটি নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।’