আমার কাগজ ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাচুত্য আওয়ামী লীগ সরকার, ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দামাতে জুলাই মাস জুড়ে নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তৎকালীন সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই, আওয়ামী লীগের পালিত পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর আইনবহির্ভূত ভাবে অমানবিক এই অত্যাচার চালায়। এদিকে পুলিশ বাহিনী ছাড়াও, আওয়ামী লীগের ভাড়াটে হেলমেট বাহিনীও ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। নির্মমভাবে এই হত্যাচেষ্ঠার অভিযোগে এবার, বিএনপির একজন সাবেক ছাত্রদল নেতা ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দ্বায়ের করেন। অবাক করার বিষয়টি হচ্ছে, দ্বায়ের করা সেই একটি মামলায়, আসামি করা হয়েছে ৫৩ জন সচিবকে। তবে আসামিভুক্ত সরকারি উচ্চপদস্থ এই ৫৩ জন সচিব কারা?
হত্যাচেষ্টার ওই মামলার এজাহারে, সাবেক সচিবদেরকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জুলাইয়ের বিপ্লবে, ছাত্র-জনতার অনেকেই আহত-নিহত হন। এসব হত্যার জন্য বিভিন্ন থানায় পৃথক ভাবে অগণিত মামলা হয়েছে। তবে একসাথে ৫৩ জন সচিবকে আসামি করে মামলা দায়ের এটিই প্রথম।
মোহাম্মদ জামান তার দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেন যে, তার মেয়ে সামিয়া খান একজন স্কুল শিক্ষার্থী। ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো, তার মেয়েও শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামেন অবস্থান করে। সেসময়ই ছাত্র-জনতার মিছিলের ওপর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা, আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করতে থাকে। এই ঘটনায় সামিয়াও গুলিবিদ্ধ হয় ও তার পায়ে এখনো তিনটি গুলি রয়েছে।
নিজের মেয়ে ও সাধারণ ছাত্র-জনতা হত্যাচেষ্টার মামলায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ, মোট ১৯৬ জনকে আসামি করে এই মামলা আদালতে দায়ের করা হয়েছে। এসব আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র এক মাস আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ থেকে অবসরে যাওয়া মো. মাহবুব হোসেন। এছাড়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, আব্দুস সোবহান সিকদার, তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রমুখ।
মামলায় সাবেক এই সচিবদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে, মোহাম্মদ জামান বলেন যে, একজন সচেতন নাগরিক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে, সাবেক এই সচিবদের অপকর্মের ব্যাপারে তিনি ভালোভাবেই অবগত। তার অভিযোগ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারকে ১৫ বছরের ক্ষমায় টিকে, উল্লেখিত সবাই সহযোগিতা করছে। তিনি আরও বলেন যে, কারো প্রচারোনায় নয়, বরং অত্যাচার ও হত্যার ক্ষোভে তিনি এই মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে মামলায় আসামিভুক্ত সচিবদের তালিকায় আরও রয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহম্মেদ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক আরেক চেয়ারম্যান নাছিমা বেগমও আসামির তালিকায় আছেন। এছাড়া সাবেক সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব মোহাম্মদ সাদিক। সাবেক অন্য সচিবদের মধ্যে রয়েছেন মোজাম্মেল হক খান, জুয়েনা আজিজ, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, হেলালুদ্দীন আহমেদ, ফয়েজ আহমেদ, সাজ্জাদুল হাসান, সালাহ উদ্দিন, লোকমান হোসেন মিয়া, আব্দুল মান্নান, আব্দুল মান্নান হাওলাদার, আবু হেনা মোরশেদ জামান, ওয়াহিদা আক্তার, হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী, মহিবুল হক, উজ্জল বিকাশ দত্ত, জাহাংগীর আলম, এম এ এন সিদ্দিক, শাহজাহান আলী মোল্লা, শ্যামল কান্তি ঘোষ, ইকবাল খান চৌধুরী, মরতুজা আহমেদ, খন্দকার শওকত হোসেন, নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, জাফর আহম্মদ খান, বরুণ দেব মিত্র, এম আসলাম আলম, রফিকুল ইসলাম, চৌধুরী মো. বাবুল হাসান, সুরাইয়া বেগম, নজরুল ইসলাম খান, শহীদউল্লা খন্দকার, আব্দুল মালেক, জিল্লার রহমান, ইবরাহীম হোসেইন খান, সম্পদ বড়ুয়া, পবন চৌধুরী, অপরুপ চৌধুরী, সামছুদ্দিন আজাদ চৌধুরী, আক্তারী মমতাজ, শাহ কামাল ও প্রশান্ত কুমার রায়।
জুলাইয়ে চালানো হত্যাচেষ্টার প্রায় তিন মাস পর, প্রথমে বাড্ডা থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন মোহাম্মত জামান। পরে খানা থেকে তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিলে, তিনি সবশেস সিএমএম কোর্টে মামলটি করেন। পরে পিবিআইকে এ মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।