সোনারগাঁও প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনটি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটি নির্বাচনি আসন।প্রথম থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু জোট দলের আনুরোধে বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
কিন্তু এবার আর তা হচ্ছে না বলে জোর গুঞ্জন চলছে এলাকায়। বিশেষ করে এ আসন থেকে ১৯৭৩ এবং ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের ছেলে এরফান হোসেন দ্বীপের সঙ্গে সম্প্রতি গণভবনে তোলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর মনোনযন প্রার্থী জোট নেতাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রে জোর দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। এরপরই মূলত সাক্ষাতের জন্য প্রধানমস্ত্রীর ডাক পান এরফান হোসেন দ্বীপ।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনটি জাতীয় সংসদের ২০৬ নম্বর আসন।এ আসন থেকে ২০১৪ সালে জোট সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা প্রথমবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে ২য় বারের মতো তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে লিয়াকত হোসেন খোকা দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের অব্যাহত চাপ এবং হেফাজত কাণ্ডে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনে এবার লিয়াকত হোসেন খোকাকে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে একাধিক সূত্র দাবি করছে।
সেক্ষেত্রে সোনারগাঁ থেকে এবার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লহ আল-কায়সার অথবা তার চাচাতো ভাই তরুন নেতা এরফান হোসেন দ্বীপের মনোনয়ন পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে এরফান হোসেন দ্বীপ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের যোগ্যতায় নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিয়ে এমপি হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
তিনি আরও বলেন, বাবার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবেই সোনারগাঁবাসীর সেবা করতে চাই আমি। পরিবারের পাশাপাশি দলীয় হাইকমান্ডেরও আমার মনোনয়নের ব্যাপারে গ্রীন সিগন্যাল রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী হাসনাত পরিবারের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মোবারক হোসেনের সন্তান এরফান হোসেন দ্বীপ অবশ্য ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।বর্তমানে তাকে নিজের ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচিই ঘটা করে পালন করছেন তিনি।
দ্বীপ জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বরাবরই সক্রিয় ছিলেন তিনি। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় আন্দোলন করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়ে জেলও খেটেছেন তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ কয়েক বছর ধরে সোনারগাঁয়ের রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় গড়ে তুলছেন নিজের কর্মীবাহিনী।
তিনি বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন ছিলেন সোনারগাঁয়ের গণমানুষের নেতা। সোনারগাঁয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। তিনি যেমন মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তেমনি মানুষও তাকে ভালোবাসতেন প্রচণ্ড রকম। সেজন্যই তিনি সোনারগাঁ থেকে দুই দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে হাসনাত পরিবারের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্বীপ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সোনারগাঁয়ে তিনবার নৌকা তথা আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। এর মধ্যে দুইবার (১৯৭৩ এবং ১৯৮৬ সালে) আমার বাবা ও একবার (২০০৮ সালে) আমার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ আল কায়সার এমপি নির্বাচিত হন।
নিজের রাজনীতি নিয়ে পরিবারের মধ্যে কারো সঙ্গে কোরো বিরোধ নেই দাবি করে এরফান হোসেন দ্বীপ আরও বলেন, নির্বাচনী মাঠে যদি আমার ভাই কায়সার হাসনাতকে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য মনে করেন- তাহলে তাকে মনোনয়ন দিবেন, আর যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন তাহলে আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে আমি কাজ করে যাচ্ছি, এতে জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। সোনারগাঁয়ের লোকজন যেভাবে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করছেন, তেমনি কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেও আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। সময়ই বলে দেবে দ্বাদশ নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন সোনারগাঁ থেকে।