
স্পোর্টস ডেস্ক
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ব্যাটারদের ধারাবাহিকতার অভাব নতুন কিছু নয়। কেউ হয়তো একটি টেস্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেন, পরের ম্যাচেই আবার সেই পরিচিত ব্যর্থতা। কেন এমন হচ্ছে? ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করেও কেন জাতীয় দলে এসে টিকতে পারছেন না? এসব প্রসঙ্গে বিসিবির কোচ সোহেল ইসলাম দিয়েছেন খোলামেলা ব্যাখ্যা।
দেশের অভিজ্ঞ কোচ সোহেলের মতে, সমস্যার গোড়ায় রয়েছে আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও মূল্যায়নের পদ্ধতি। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে কিছু রান করলেই সবাই মানসিকভাবে সন্তুষ্ট হয়ে যায়-চাই সেটা খেলোয়াড় হোক, কোচ হোক বা মিডিয়া। এটা এক ধরনের মানসিকতা, যা খেলোয়াড়দের ধারাবাহিক উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’
ঘরোয়া ক্রিকেটের মান ও প্রতিযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই কোচ। তার মতে, ‘যেখানে ৫ বোলারের মধ্যে ৪ জনই ভালো, সেখানে প্রতিটি ইনিংসই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে হয়তো দুইজন বোলার ভালো বল করছে, বাকিদের সামলানো সহজ। ফলে ব্যাটাররা রান করলেও সেটা কঠিন পরিস্থিতিতে কতটা এসেছে, তা ভাবার বিষয়।’
ব্যাটারদের ব্যর্থতার আরেকটি বড় কারণ হিসেবে তিনি দেখছেন উইকেট। ‘যদি নিয়মিত লো বাউন্স উইকেটে খেলে অভ্যস্ত হয়ে যায় কোনো ব্যাটার, তাহলে ভয় চলে আসে। ব্যাটাররা তখন শট খেলতে চায় না, রিস্ক নিতে চায় না। তখন ব্যাটিং প্যাটার্নে সেটা প্রভাব ফেলে।’ তার মতে, ফ্ল্যাট উইকেট নয়, দরকার বৈচিত্র্যময় উইকেট যেখানে ব্যাটাররা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং সেই সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে।
একই সঙ্গে ফরম্যাট অনুযায়ী মানসিকতা ও ব্যাটিং কৌশলের মধ্যে যে পার্থক্য, সেটিও তুলে ধরেন এই কোচ। ‘লাল বল ও সাদা বলের ব্যাটিং আলাদা। শর্ট খেলা, মানসিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা-সবই আলাদা। এটা বুঝিয়ে দেওয়া আমাদের কোচদের দায়িত্ব। ভালো খেলোয়াড়রা সব ফরম্যাটে খেললে ঘরোয়ার মানও বাড়বে।’ তিনি জানান, জাতীয় দলের ব্যাটারদের এই ‘সফট মাইন্ডসেট’ বদলাতে চেষ্টা চলছে।
শান্তর সঙ্গে নিজের আলোচনার কথা টেনে সোহেল বলেন, ‘কেউ টেস্টে দুই ইনিংসে ১০০ করেছে। তার মানে পরের টেস্টেও রান করাটা তার দায়িত্ব। আমাদের দেশে কিন্তু এমন মানসিকতা এখনো গড়ে ওঠেনি। ভারতে এমন উদাহরণ আছে। আমরা চাই ছেলেরা এই ধারায় চলে আসুক।’
সোহেল আরও বলেন, ‘বড় রান করাটাও একটা অভ্যাস। এটা এমন না যে এক ম্যাচে দুইটা সেঞ্চুরি মানেই শেষ, বরং তখন আরও ক্ষুধার্ত হয়ে মাঠে নামতে হবে। আমরা সেই ক্ষুধা তৈরি করতে চাচ্ছি। একটা আদর্শ তৈরি করছি, যেন ব্যাটাররা নিজেরাই নিজের লক্ষ্য তৈরি করতে পারে।’
শেষ পর্যন্ত তিনি আবারও ফিরে আসেন বোলিং মান ও উইকেটের দিকে। ‘ভালো উইকেট দিলে বোলাররাও আগ্রহী হবে ভালো করতে। বোলার ভালো না হলে ব্যাটারও কখনো উন্নতি করতে পারবে না। তাই শুধু মেশিনে বা ব্লকে নয়, মাঠেই তাদের মানসিকতা, স্কিল, শর্ট নির্বাচনের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। ভালো চ্যালেঞ্জের মুখেই ভালো ব্যাটার তৈরি হয়।’