
আমার কাগজ প্রতিবেদক
পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর গুলশানে একদিনেই চারটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন পুলিশের সাবেক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
বছরখানেক আগে ২০২৩ সালের ৫ মার্চ রাজধানীর অন্যতম দামি ও অভিজাত এলাকায় কেনা ফ্ল্যাটগুলোর দাম দেখানো হয় মাত্র দুই কোটি ১৯ লাখ টাকা।
তবে এবার সেই চারটি ফ্ল্যাটসহ তার ১১৯টি দলিল জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জব্দের তালিকায় আছে সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজারে তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট ও ১৯ প্রতিষ্ঠানের মালিকানা।
চাকরির সময় পুলিশে শীর্ষ পদগুলোতে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, র্যাবের মহাপরিচালক এবং সবশেষে আইজিপি পদ থেকে অবসরে যান প্রভাবশালী এই কর্মকর্তা।
এরপরই বেরিয়ে আসে বেনজীর, তার স্ত্রী ও কন্যাদের বিপুল সম্পদের তথ্য, যার বাজারমূল্য কয়েকশো কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতনের টাকায় সম্পদ এই পাহাড় গড়ে তোলা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মাঠে নেমেই তদন্ত কর্মকর্তারা সাবেক আইজিপির বিপুল সম্পদের সন্ধান পান। প্রথমে বেনজীর, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা সম্পদ জব্দ করতে আদালতে আবেদন করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা।
সেদিন আদালত ৮৩টি দলিলের ৩৪৫ বিঘা জমি জব্দ এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে তাঁদের নামে থাকা ৩৩টি হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন।
এরপর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরো সম্পদের হদিস। আদালতে আবার অনুমতি চাওয়া হলে রোববার সেসব সম্পদও অবরুদ্ধ ও জব্দ করতে আদেশ দেওয়া হয়।
এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে- ঢাকার অভিজাত এলাকায় চারটি ফ্ল্যাট, সাভার ও মাদারীপুরে জমিসহ ১১৯টি দলিলে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা শেয়ার ও মালিকানা।
একইভাবে বিদেশে তার কোনো সম্পদ থাকলে সেসবও জব্দের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
তারেক রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, পাওয়া গেলে তো অবশ্যই বিদেশের সম্পত্তি ক্রোক ও জব্দ করার বিধান আছে।
‘তারেক, মামুনের টাকা; এগুলো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জায়গায়… আইন আছে, সেগুলো করার প্রক্রিয়াও আছে,’ যোগ করেন তিনি।
মাহমুদ হোসেন বলেন, মানিলন্ডারিং আইনে তদন্ত কর্মকর্তা ও আদালতকে এমন ক্ষমতা দেওয়া আছে যে, তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবকিছু করার অধিকার রাখেন।
তবে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লড়ার কথা জানিয়েছেন বেনজীর আহমেদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। বলেন, আদেশ ও অভিযোগ দুইটায় দেখছি আমরা। তারপর আমাদের ডিফেন্স তৈরি করে, হাইকোর্টে কী ব্যবস্থা নেব, তা আমরা জানাবো।
আদালত জব্দের নির্দেশ দেওয়ায় বিপুল সম্পদ দেখভাল করবে কে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় বেনজির আহমেদের জব্দ সম্পদ দেখভালের জন্য সরকার কোনো প্রশাসক নিয়োগ করবে কিনা, তা আদালতের সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, কমিশন (দুদক) যদি মনে করে যে, এই সমস্ত সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগ করা প্রয়োজন, তাহলে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে উনারা হয়তো রিসিভার নিয়োগের দরখাস্ত দেবেন।
এই আইনজীবী জানান, বেনজির আহমেদের বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন এমনটা মনে হলে তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশযাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েও আবেদন করা হবে।
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অবৈধ সম্পদ নিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি ও তার স্ত্রীর শত শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে আলোচনা ওঠে। এর বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সম্পদ নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
রিটের পরপরই দুদক থেকে জানানো হয়, বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে নিজের সম্পদ নিয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, সেগুলোকে ‘অসত্য’ বলে দাবি করেছেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর।