
আমার কাগজ প্রতিনিধি
দেশের উপজেলা পর্যায়ের প্রায় সব দপ্তরের দপ্তর প্রধান হিসেবে ৯ম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মরত থাকলেও ব্যতিক্রম রয়ে গেছে আনসার ও ভিডিপি অধিদপ্তরে। এই অধিদপ্তরের উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তারা এখনো ১০ম গ্রেডেই রয়ে গেছেন। অথচ উপজেলা পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা কমিটি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিটি দপ্তরের প্রধান ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা। মাঠ পর্যায়ে আনসার ও ভিডিপি উপজেলা কার্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদের ‘আপগ্রেডেশন’ বা পদমর্যাদাসংক্রান্ত প্রস্তাব এখনো ফাইলবন্দি।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) তথ্য অনুযায়ী, আনসারের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে ১৮৯টি সহকারী পরিচালক বা সমমান পদ রয়েছে, যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৩টি পদে ৮১৯টি উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা বা সমমান পদ থেকে পূরণ করতে হবে। এই ৬৩টি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বাকি উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তারা পদোন্নতি ছাড়াই বাকি চাকরি জীবন শেষ করে অবসরে চলে যান। ৬৩টি পদে ‘শূন্য’ সাপেক্ষে উপজেলার আনসার ভিডিপি কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা বা সমমান পদের কর্মকর্তারা প্রেষণে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে উপসহকারী পরিচালক পদে যুক্ত হন। অথচ অন্যান্য বাহিনী থেকে আগত সব সহকারী পরিচালকগণ ৯ম গ্রেডের হওয়ায় মাঠ পর্যায়ের সমন্বয় সাধনে জটিলতার সৃষ্টি হয়। আবার উপসহকারী পরিচালকের অধীনে সাব-ইন্সপেক্টর বা সমমান পর্যায়ের কর্মকর্তা ১০ম গ্রেডের হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ডে সমস্যা দেখা দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালে পুলিশের ইন্সপেক্টর পদ এবং আনসারের থানা/উপজেলা পদ আপগ্রেডেশনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবনা অনুযায়ী এই দুই বাহিনীর দুটি পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার বিষয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়। পরে ২০১২ সালে পুলিশের ইন্সপেক্টর পদ দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণি (পরে ৯ম গ্রেড) এবং সাব-ইন্সপেক্টর পদ তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে (পরে ১২তম গ্রেড) উন্নীত করা হয়। উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তার পদের আপগ্রেডেশন করা হয়নি। এ নিয়ে উপজেলার আনসার ভিডিপি কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাদের পদের আপগ্রেডেশনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা বলেন, আমরা বঞ্চিতরা আমাদের দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনসার শাখায় স্মারকলিপি দিয়েছি। এর মধ্যে ২০২৩ সালে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে (নন-ক্যাডার) উন্নীত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঐ বছরের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আনসার ভিডিপির (বিএভি) সদর দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) জাহানারা আক্তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে একটি স্মারকপত্র পাঠান। স্মারকপত্রে বলা হয়, ‘বাহিনীর ১০ম গ্রেডের প্রাধিকৃত ৮১৯টি সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত অনেকের বেতন স্কেল ইতিমধ্যে ৯ম গ্রেড (নন-ক্যাডার) এর বেতন স্কেলের নিম্নধাপ অতিক্রম করেছে এবং যাদের বেতন ৯ম গ্রেড (নন-ক্যাডার) অতিক্রম করেনি, তাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সরকারের বার্ষিক অতিরিক্ত ৫ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। এমতাবস্থায়, সূত্রপত্র ‘ঘ’ মূলে প্রেরিত প্রস্তাবটি বাতিলপূর্বক অত্র বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট পদকে ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে প্রেরণ করা হলো।’
২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনসার শাখায় অতিরিক্ত সচিবের (আনসার ও সীমান্ত অনুবিভাগ) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো আনসার ভিডিপিতে ১০ম গ্রেডের সার্কেল অ্যাডজুট্যান্ট/উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা/সহকারী অ্যাডজুট্যান্ট পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে আনসার ক্যাডার বহির্ভূত নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০১০ (সংশোধিত) নিয়োগবিধিতে পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী বিধিমালা সংশোধন প্রস্তাব প্রেরণ করতে হবে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আনসার শাখা-১-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাদের পদের আপগ্রেডেশনের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।’ এক বছর ধরে কেন বিষয়টি ফাইলবন্দি হয়ে আছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।