
আমার কাগজ প্রতিবেদক
আশ্রয়প্রার্থী তরুণীকে শ্লীলতাহানি করায় রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ভুঁইয়াকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
বুধবার দুপুরে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কলেজটির সাবেক উপাধ্যক্ষ সাইফুর রহমান ভুঁইয়া হত্যার ঘটনায় ফরিদপুর থেকে অভিযুক্ত রুপা ও নাজিম দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত রুপাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টাকালে আত্মরক্ষার জন্য সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন তার স্বামী নাজিম। পরে বাথরুমে আটকে রেখে পালিয়ে যান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ঘটনাক্রমে কমলাপুর রেলস্টেশনে সাইফুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই দম্পতির। অসহায়ত্বের কারণে ওই দম্পতিকে বাসায় এনে আশ্রয় দেন সাইফুর রহমান। এরপর থেকেই রুপাকে বিভিন্নভাবে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেন তিনি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান ওই দম্পতি। গ্রেফতারের পর এ দম্পতিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নাজিম হোসেন ও রুপা বেগম দম্পতিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বাসায় নিয়ে অসদাচরণ করতেন সাইফুর রহমান। এছাড়া, নাজিমের অনুপস্থিতিতে ওই তরুণীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেন। সবশেষে গত ৯ মার্চ রাতে ওই তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা করলে তার স্বামী নাজিম প্রতিবাদ করেন। এ সময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে বঁটি দিয়ে সাইফুর রহমানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রুপা ও তার স্বামী নাজিম পালিয়ে যান।
এরপর ১০ মার্চ সকালে উত্তরার উত্তরখান থানা এলাকার পুরানপাড়ার একটি বাসা থেকে সাইফুর রহমানকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হলে রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। পরে গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। নাজিম (২১) ও রুপার (২৩) কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি চাবির রিং ও একটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, নিহতের ফ্ল্যাট থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো বঁটি, একটি ধারালো চাকু ও রক্তমাখা জামা-কাপড় এবং বিছানার চাদর উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গত ১১ মার্চ নিহতের তার ছোট ভাই মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ভুঁইয়া বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সাইফুর রহমান উত্তরখানের পুরানপাড়া বাতান এলাকায় তার স্ত্রীর পৈত্রিক আড়াই শতক সম্পত্তিতে বাড়ি নির্মাণ করার জন্য গত ৩-৪ মাস ধরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। যেখানে ঘটনাস্থলের সামনেই তার এ জায়গাটি।
সাইফুর রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোনো বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, থাকতে পারে। তদন্তের জন্য তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে আমরা সেই ধরনের কোনো তথ্য পাইনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবে এটি হত্যা মামলা। আদালতে মামলাটি যখন ট্রায়াল হবে, তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যে পরবর্তী সময়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।