
যশোর প্রতিনিধি
যশোরে আদালত চত্বর থেকে জুয়েল খান নামে হত্যা মামলার এক আসামি পালিয়ে গেছেন। রোববার (১৮ মে) বেলা ৩টার দিকে জেলা দায়রা জজ আদালত চত্বর থেকে তিনি পালিয়ে যান।পলাতক জুয়েল খানের বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার রামপুর গ্রামে। ২০২১ সাল থেকে জুয়েল যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাগুরার শালিখা উপজেলার হরিশপুর গ্রামের ইজিবাইক চালক আল-আমিন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি জুয়েল। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মাগুরা থেকে আল আমিনের ইজিবাইক ভাড়া করে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বুধোপুর গ্রামে এনে তাকে হত্যা করের ঘটনা ঘটে। হত্যার পর আল আমিনের ইজিবাইক নিয়ে চম্পট দেয় জুয়েল ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় বাঘারপাড়া থানায় মামলা হয়। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর র্যাব-৬ খুলনার স্পেশাল টিম জুয়েলসহ মামলার চার আসামিকে আটক করে এবং তারা হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। পরে তাদেরকে বাঘারপাড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকেই জুয়েল কারাগারে আটক ছিল।
আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, ওই মামলায় রোববার সকালে জুয়েল ও হারুন অর রশিদকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এজলাসে তাদের হাজির করা হয়। আদালত তাদের ফের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। নারী পুলিশ কনস্টেবল সোনালী তাদের দুজনকে নিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। নিচতলার সিঁড়ির কাছে পৌঁছালে কৌশলে জুয়েল খান হাতকড়া ভেঙে পালিয়ে যায়। কনস্টেবল সোনালী চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন তাকে তাড়া করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পলাতকের খবর শুনে তারা জুয়েলকে ধাওয়া করেন। এ সময় জুয়েল জজ আদালতের সামনের গেট দিয়ে বের হয়ে মসজিদের সামনে দিয়ে দৌঁড়ে আইনজীবী সহকারী সমিতির কার্যালয়ের পাশ দিয়ে খড়কির দিকে চলে যায়।
আদালত চত্বর থেকে কৌশলে হাতকড়া খুলে পালিয়েছে আসামিআদালত চত্বর থেকে কৌশলে হাতকড়া খুলে পালিয়েছে আসামি
এদিকে, খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আবুল বাসার, কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাতসহ পুলিশ কর্মকর্তারা আদালতে ছুটে যান। একইসঙ্গে পুলিশের একাধিক টিম জুয়েলকে খুঁজতে অভিযানে নামে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অভিযানে রয়েছে।
এ বিষয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, জুয়েলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এছাড়া ঘটনার সার্বিক বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর ইজিবাইক ভাড়া করে খুনিরা চালক আল-আমিনকে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বুধোপুর গ্রামে নিয়ে যায়। এরপর আল আমিনের হাত-পা বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে হত্যা করে। দুর্বৃত্তরা টাকা ও ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন পুলিশ বুধোপুর থেকে আল আমিনের লাশ উদ্ধার করে। একইসঙ্গে ইজিবাইকও উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তে র্যাব সদস্যরা জুয়েল খান, আল-আমিন, হারুন অর রশিদ ও মো. রাসেলকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে আল-আমিনের ইজিবাইকের ব্যাটারি, চাকা ও ছুরি উদ্ধার করা হয়। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঘারপাড়া থানার এসআই হরষিত রায় আসামি জুয়েল ও একই গ্রামের সেলিম হোসেনের ছেলে হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটির বিচারকার্য চলছে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে।