আমার কাগজ প্রতেবেদক
সন্তান মা-বাবার জন্য আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। সন্তানকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। নবজাতক যেন আল্লাহর রহমতে বিপদ থেকে নিরাপদে থাকে এজন্য ইসলামে আকিকার বিধান দেওয়া হয়েছে। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম।
রাসুল (সা.) তার প্রিয় দুই দৌহিত্র হাসান-হুসাইন (রা.)-এর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করেছেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আকিকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৭৬৬৯)। তবে পরেও আকিকা দেওয়ার সুযোগ আছে।
বর্ণিত হয়েছে, সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। ‘স্থায়ী সৎকর্ম’ তোমার রবের কাছে পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশান্বিত হওয়ার জন্যও সর্বোৎকৃষ্ট। (সূরা কাহফ, আয়াত : ৪৬)। অর্থাৎ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার পরকালে কল্যাণ বয়ে আনবে। অন্যথায় পরকালে এসব কোনো কাজে আসবে না। পরকালে গুরুত্বপূর্ণ হলো সৎকর্ম। বিশেষত, স্থায়ী সৎকর্মগুলোর গুরুত্ব আল্লাহর কাছে অনেক বেশি।
কিছু সৎকর্ম মৃত্যুর পরও বাকি থাকে; যেমন—সুশিক্ষা প্রদত্ত সৎ সন্তান, জ্ঞান বিতরণ ও জনকল্যাণমূলক কাজ। এসব কাজের সুফল পাওয়া যায় অনন্তকাল। মৃত্যুর পরও এর প্রতিফল চলমান থাকে।
আকিকা কি দিতেই হবে, কীভাবে দেবে?
অধিকাংশ ফিকাহবিদের মতে-আকিকা মুস্তাহাব একটি আমল। এটি পালনে বাধ্য করা হয়নি, বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্তানের আকিকা করার ইচ্ছা করে, সে যেন তা পালন করে। এক্ষেত্রে ছেলের জন্য সম-মানের দুটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৯৬১) তবে ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা দিলেও মুস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে। যদিও দুটি করা উত্তম। (কিফায়াতুল মুফতি: ৮/২৪৪) বকরির অনুরূপ গরু, মহিষ, উট ইত্যাদির মাধ্যমেও আকিকা সহিহ হবে। কোরবানির মতো একাধিক শরিকে এক পশু দিয়েও আকিকা দেওয়া যাবে। এমনকি একই জন্তুতে কোরবানি ও আকিকা একইসঙ্গে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সুন্দর নাম রাখার বিষয়ে ইসলাম
নাম রাখার ব্যাপারে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। হাশরের মাঠে আল্লাহর সব সৃষ্টিকে নাম ধরে ডাকা হবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, “রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে-হে অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখো।’ (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস: ৪৯৪৮)।”
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে ইসলাম
আকিকার সময় দেওয়া নাম কোনো কারণে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করার সুযোগ আছে। কারও প্রদত্ত নাম যদি অসুন্দর হয় তবে সেটা পরিবর্তন করে সুন্দর অর্থবহ নাম রাখা হলে আকিকার প্রয়োজন নেই। বরং অর্থহীন ও অসুন্দর নাম বদলে সুন্দর নাম রাখা সুন্নাহসম্মত কাজ। মহানবী (সা.) নারী-পুরুষ বিভিন্ন সাহাবির নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন আকিকা করেছেন—এমন প্রমাণ নেই। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মন্দ ও অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে দিতেন।’ (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ২৮৩৯)