
আমার কাগজ ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি দরপতন হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দায় প্রবেশের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তা আপাতত বিবেচনায় নেবেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প- এমন ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় এখনই শেয়ার বিক্রি করে দিতে চাইছেন শেয়ারহোল্ডাররা। ফলে, ব্যাপক দরপতন দেখা দিয়েছে।
গতকাল সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০ কোম্পানির সূচক এসঅ্যান্ডপি-৫০০ কমেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, যা বছরের সবচেয়ে বড় দৈনিক দরপতন। অপর মার্কিন শেয়ারবাজার সূচক নাসডাক কম্পোজিট হ্রাস পেয়েছে ৪ শতাংশ, যা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর একদিনে সবচেয়ে বড় পতন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এসঅ্যান্ডপি-৫০০ শেয়ারদর ছিল রেকর্ড উচ্চতায়। সোমবার সেই তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ কম লেনদেন নিয়ে দিন শেষ হয়। যার ফলে বাজার থেকে বের হয়ে গেছে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। অন্যদিকে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজার নাসডাকও গত বৃহস্পতিবার সাম্প্রতিক সময়ে দরের বৃদ্ধির রেকর্ড করেছিল। কিন্তু গতকাল সোমবার গত ডিসেম্বরের রেকর্ড উচ্চতার তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের একের পর এক নতুন নীতির কারণে ব্যবসা, ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেড়েছে। বিশেষ করে, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের মতো প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের কারণে তৈরি হয়েছে এই অনিশ্চয়তা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ওয়েলথ এনহ্যান্সমেন্টের জ্যেষ্ঠ বিনিয়োগ কৌশলবিদ আয়াকো ইয়োশিওকা বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের চিন্তায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তারই প্রতিফলন আমরা শেয়ারবাজারে দেখতে পাচ্ছি।’
শুধু মার্কিন বাজারই নয়, এশিয়ার শেয়ারবাজারেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে। আজ মঙ্গলবারের প্রাথমিক লেনদেনে জাপানের নিক্কেই-২২৫ সূচক ২ দশমিক ৩ দশমিক কমে গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং হংকংয়ের হ্যাং সেন্ড ইনডেক্স নেমেছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
এদিকে, বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার শেয়ারের দরপতন হয়েছে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এআই চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার দরপতন হয়েছে ৫ শতাংশ। দরপতন হয়েছে মেটা, অ্যামাজন এবং অ্যালফাবেটের মতো বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানেরও।
গত রোববার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আগেভাগেই এ ধরনের ইস্যুতে ভবিষ্যদ্বাণী করা অপছন্দ করি। আমরা একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের সম্পদ ফিরিয়ে আনছি এবং এটা অনেক বড় একটি বিষয়।’
আর এই বক্তব্যের পরই অস্থির হয়ে পড়ে শেয়ারবাজার। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বৈশ্বিক আর্থিক পরিষেবা সংস্থা কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, ‘শুল্ক নীতি নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নেতাদের তো অনিশ্চয়তায় রাখছেই, অনিশ্চয়তায় তৈরি করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও। আর সেখানেই মূল সমস্যাটা হচ্ছে। এ কারণেই শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্দা নিয়ে এখনই আলোচনা করা খুব তাড়াতাড়ি মনে হলেও, বিনিয়োগকারীদের জন্য তা জরুরি।’
অপরদিকে, হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শেয়ারবাজারের চাঙা মনোভাব ও ব্যবসায়িক নেতাদের বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে পরের বিষয়টি স্পষ্টতই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
পরে এক পৃথক বিবৃতিতে, হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই জানান যে- বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের নীতিগুলোর প্রতি সাড়া দিয়েছেন এবং ‘ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন।