মো. আকতার হোছাইন কুতুবী:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজর মহাসড়কের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানচাপায় নিহত ৬ সহোদরের শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানাতে বুধবার দুপুরে নিহতদের বাড়িতে যান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ।
এ সময় তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬ পরিবারকে ৬০ হাজার টাকা করে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা হস্তান্তর করেন এবং তাদের জন্য মালুমঘাট হিন্দুপাড়া (নাথপাড়া) এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুজিববর্ষের জমিসহ ৮টি নতুন বাড়ি দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এছাড়া নিহতদের পরিবারে যাদের কর্মসংস্থান দরকার, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন। তিনি শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের জন্য বড় পরিসরে বরাদ্দ এনে দেওয়ার আশ্বাস দেন। নিহতদের পরিবারের প্রতি সব সময় খোঁজখবর রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশও দেন জেলা প্রশাসক।
এ সময় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেপি দেওয়ান, সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) মো. তফিকুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান, চকরিয়া থানার ওসি মো. ওসমান গনি, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সাংবাদিক নেতা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জাতীয়, জেলা ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে নগদ আর্থিক সহায়তা, স্থায়ী আমানতের (ফিক্সড ডিপোজিট) কাগজপত্র এবং খাদ্যদ্রব্য সামগ্রী ছাড়াও কাপড় ও কম্বল দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকায় পিতার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে পিকআপ চাপায় একসঙ্গে ৫ সহোদরের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। পরে ১৪ দিন পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে রক্তিম শীলও (৩৫) মারা যান। আহত বোন হীরা শীল এখনো মালমুঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহদের ছোটভাই প্লাবন সুশীল (২৪) বাদী হয়ে পিকআপ ভ্যানচালককে আসামি করে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে র্যাব-১৫ এর একটি দল ঢাকা মহানগর থেকে চালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। তাকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হলে বিচারক তাকে তিন দিনের রিমান্ড দেন। রিমান্ড শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা মৃণালীনি বালা সুশীল বলেন, আমার পরিবারে আর উপার্জনক্ষম কেউ নেই। আমার বেঁচে থেকে এখন আর কী হবে। ছয় সন্তান ছেড়ে আমি এখন কী নিয়ে বেঁচে থাকব। আমার চোখের সামনে শুধু অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।