
যশোর প্রতিনিধি
ইচ্ছা আছে, আছে স্কুলও। শুধু নেই স্কুলে যাওয়া আসার রাস্তা। ফলে বছরের তিন মাস ক্লাসে যেতে পারে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। নেই বিদ্যালয়ের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা। ধানের জমির আইলের ওপর দিয়ে বছরের বাকিটা সময় ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। ভূমিদস্যুদের কারণে সে পথটিও এখন হুমকির মুখে। তার ওপর প্রায় ৭ বছর ধরে নেই বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ১০ শিক্ষক কর্মচারীর পদ এখন শূন্য। এমন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বন্যাকবলিত মশ্মিমনগর ইউনিয়নের খাজুরা কাঁঠালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সমাজসেবক ইসহাক আলী জানান, পশ্চাৎপদ বন্যাকবলিত মশ্মিমনগর ইউনিয়নবাসীদের শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করার লক্ষ্যে ১৯১৬ সালে নির্মাণ করা হয় খাজুরা কাঁঠালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কপোতাক্ষ নদের চরের ওপর প্রায় ৩ বিঘা জমিতে স্থাপন করা হয়েছিল বিদ্যালয়টি। যার অপর পাশে রয়েছে পার খাজুরা বাঁওড়। বাকি দু’পাশ বিস্তৃত ফসলি জমি। মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের ১ বছরের মাথায় একই ক্যাম্পাসে নির্মাণ করা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ও।
বর্তমানে ওই ক্যাম্পাসে ২টি অ্যাকাডেমিক ভবন ১টি শিক্ষক কর্মচারী মিলনায়তন, ২টি টিউবওয়েল, ৩টি ওয়াশরুম থাকলেও নেই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের নিজস্ব কোনো রাস্তা। বর্তমানে মাধ্যমিকে ৩৫০ জন ও প্রাথমিকে ২৫০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে।
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাজেশ দত্ত জানায়, বছরের প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস অর্থাৎ বর্ষাকালে ধানের জমির আইলের ওপর দিয়ে বিদ্যালয়ে আসার একমাত্র পথটি অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। উৎপাত বৃদ্ধি পায় সাপসহ বিভিন্ন বিষাক্ত পোকামাকড়ের। এতে করে বিদ্যালয়ে আসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী অরুনী মাছুদ নদীয়া জানায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বই, খাতা নিয়ে কাদায় পড়ে যায়। বিদ্যালয়ের পোষাক কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় তখন অনেকটা বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না শিক্ষার্থীদের।
মশ্মিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, বিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র আইলটি তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা খরচ করে মাটি ফেলে চড়া করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় ভূমিদস্যুদের কারণে সেটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় ভূমি দস্যুরা জমির ওই আইলটি নিজেদের নামে রেকর্ডভুক্ত করে নিয়েছেন। অথচ এক সময় ওই জমিটি কপোতাক্ষ নদের চরের জমি হিসেবে সরকারের খাস জমির অর্ন্তভুক্ত ছিল। তবে ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য স্থায়ী একটি পাকা সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।
উপজেলার খাজুরা কাঁঠালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ জানান, তিনি ২০১৭ সালের ১১ মার্চ ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের পর বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় তিনি বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। বন্যার হাত থেকে রক্ষা ও দৈনন্দিন পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীর সাথে আলাপ আলোচনা করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য একটি ছোট রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।
খাজুরা কাঁঠালতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকবার আলী জানান, স্বনামধন্য এই বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তার জন্য একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনসহ শিক্ষা অধিদফতর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু যুগের পর যুগ পার হলেও এ ব্যাপারে কোনো সমাধান আসেনি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকবার আলী আরও জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারী থাকার কথা ২১ জন। সেখানে বর্তমানে রয়েছে ১১ জন। অথচ প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব সহকারী, ভৌত বিজ্ঞান শিক্ষক, অফিস সহকারী, ও চতুর্থ শ্রেণির ৩ পদসহ সর্বমোট ১০টি পদ দীর্ঘ ৮ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একই সাথে গত ৭ বছর ধরে নেই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ। ফলে যাতায়াতের রাস্তাসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে আছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার জানান, বিষয়গুলো সমাধানে কাজ চলমান আছে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।