আমার কাগজ ডেস্ক
চলমান ইসরাইল-গাজা সংঘর্ষের মধ্যে বিশ্ববাসীর জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছেন হামাস কমান্ডার মাহমুদ আল-জাহার। তিনি বিশ্বব্যাপী হামাসের আধিপত্য বিস্তারের বার্তা দিয়েছেন।
বুধবার হামাসের সিনিয়র কমান্ডারের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিওবার্তা এমন সময়ে প্রকাশ এসেছে, যখন ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সপ্তাহব্যাপী হামলায় ১২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও তিন হাজারের বেশি ইসরাইলি।
ভিডিওতে হামাস কমান্ডার মাহমুদ আল-জাহার দাবি করেছেন, ইসরাইল আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। তবে সমগ্র বিশ্বে আমরা হামাসের প্রভাব বিস্তার করতে চাই।
‘ইসরাইলই কেবল প্রথম লক্ষ্য— পুরো বিশ্ব আমাদের আইনের অধীনে থাকবে। ’
তিনি বলেন, পৃথিবীর সমগ্র ৫১০ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার একটি ব্যবস্থার অধীনে আসবে। যেখানে লেবানন, সিরিয়াতে ফিলিস্তিন এবং আরবরা এক হয়ে যাবে। যেখানে কোনো অন্যায়, নিপীড়ন, কোনো হত্যাকাণ্ড এবং অপরাধ থাকবে না।
ভিডিওটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এমন অবস্থার মধ্যে অভিযানে প্রত্যেক হামাস সদস্যের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ ঘোষণা করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাদের সব সদস্যকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ইসরাইল এরই মধ্যে জরুরি সরকার গঠন করেছে। সেই সরকারের প্রথম বৈঠকের পর নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করেন। এ ছাড়া ইসরাইলের বিরোধী নেতা বেনি গ্যান্টজ বলেছিলেন, এটি ‘যুদ্ধের সময়’।
বুধবার হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মাঝে জাতীয় সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধীরা। কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বিরোধীদলীয় নেতা বেনি গান্তেজ জাতীয় সরকার গঠনে রাজি হন। পরে সন্ধ্যার দিকে দেওয়া এক ভাষণে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যেক হামাস সদস্যকে মৃত দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রত্যেক হামাস সদস্যই (আমার চোখে) মৃত ব্যক্তি বা ডেড ম্যান।’ সাধারণত পশ্চিমা বিশ্বে প্রাচীন আমলে প্রতিপক্ষকে হত্যা করার হুমকি দিতে এই ডেড ম্যান শব্দটি ব্যবহার করা হতো।
ইসরাইলে মৃতের সংখ্যা ১২০০ ছুঁয়েছে। গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ১২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
জরুরি সরকার গঠনের মানে হলো— যুদ্ধকালীন যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়; এ ধরনের কোনো বিল বা সরকারি সিদ্ধান্ত ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে পাশ হবে না। পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সব সিনিয়র কর্তৃপক্ষ নিয়োগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়ানো হবে।
গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ইসরাইলের দিকে ৫ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। একই সঙ্গে স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েন হামাস যোদ্ধারা। ইসরাইলও এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে।
সাধারণত যুদ্ধ শুরু হলে সামরিক অবস্থানে হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। তবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সেসবের কিছুই মানছে না ইসরাইল। তারা যেন একেবারে সব শেষ করে দিতে হামলা করছে। বেশিরভাগ মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুলও বাদ যাচ্ছে না।
এদিকে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে গাজার জরুরি ও সামান্য বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছিল। এখন গাজা পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় ইসরাইল। এর ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে কোনো প্রকার জরুরি পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।