শুধু আইনের প্রয়োগ করে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মতো সামাজিক সংকট নিরসন সম্ভব নয় বলে মনে করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার কারণে প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং অপরাধীদের প্রভাবের ভয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চায় না। একইসাথে দেরির কারণে মানুষের আবেগও হ্রাস পায়।
শনিবার সকালে তেজগাঁওয়ে এফডিসিতে ‘গণজাগরণই পারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও প্রতি বছর দশ শতাংশ হারে নারী নির্যাতনসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বাড়ছে। গণজাগরণের মাধ্যমে বিশেষ ইস্যুতে যে সাফল্য অর্জিত হয় তা পরবর্তী সময়ে টেকসই হয় না। আমাদের দেশের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দেওয়া হয় না। তাই আমরা যথাযথভাবে দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তুলতে পারছি না। ফলে বিভিন্ন সময়ে সমাজের কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।’
নগর পুলিশের প্রধান বলেন, ‘পুলিশি তদন্তে দেখা যায় রামু ও নাসিরনগরের ঘটনায় স্থানীয়ভাবে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলের কর্মীরা জড়িত ছিল। কুমিল্লার ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক ইন্ধন আছে কি না তা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে পুলিশের কোনো কর্মকর্তার অবহেলা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘সম্প্রতি দুর্গাপূজার সময় যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছে তাতে আমরা লজ্জিত, ব্যথিত ও মর্মাহত। সাম্প্রদায়িক হামলার তদন্ত হয় কিন্তু দৃশ্যমান বিচারের নজির খুবই কম। তাই ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বারবার দায়মুক্তি পাওয়ার কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে যাতে এসব উগ্রবাদী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে না পারে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
কিরণ বলেন, ‘সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলে কারা লাভবান হয় তা উৎঘাটন করা জরুরি। অপ্রিয় হলেও সত্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রে মুসলিমদের ওপর কোনো নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে তার রেশ বাংলাদেশের হিন্দু ভাই-বোনদের ওপর এসে পড়ে। আবার বাংলাদেশে কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বরীরা আক্রান্ত হলে তার রেশ ভারতের মুসলমানদের ওপর গিয়ে পড়ে। তাই বাংলাদেশের মুসলিম ভাইবোনদের খেয়াল রাখতে হবে বাংলাদেশে তাদের কোনো উগ্রবাদিতায় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলে ভারতে অবস্থানরত ২০ কোটির বেশি মুসলমানরা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। তাই এই ধরনের ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে প্রতিযোগিতায় প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে কুমিল্লা ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মৌ খন্দকার, সাংবাদিক আলাউদ্দিন আরিফ, সাংবাদিক শাহনাজ শারমীন ও সাংবাদিক অনিমেষ কর।