
রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহীতে তিনটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ হাজারের বেশি গাছ কাটা পড়ছে। এতে শহরের প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। তবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো স্পষ্ট করেছেন, গাছ কেটে বা জলাধার ভরাট করে কোনো উন্নয়ন তারা চায় না। বিষয়টি নিয়ে স্মারকলিপি ও প্রতিবাদের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শহরে শুষ্ক মৌসুমে তাপমাত্রা চরমভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা বিশেষ জরুরি। সেই প্রেক্ষাপটে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ, ওয়াসার নতুন পাইপলাইন স্থাপন এবং রাজশাহী সার্কিট হাউস সম্প্রসারণ প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ৩২৩টি গাছ কাটা হচ্ছে। এতে শহরের বনভূমি ও জলাধারের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ছে, যার ফলে আবাসস্থল হারাচ্ছে নানা প্রাণিকূল।
খোঁজে জানা গেছে, সিলিন্দা ডাবতলা এলাকায় রামেবির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ১ হাজার ৮৫৩টি গাছ কাটা হবে। ইতিমধ্যে কিছু গাছ কাটা হয়েছে। নগরীতে পদ্মা নদী থেকে পরিশোধিত পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসার নতুন পাইপলাইনের জন্য ৪১৮টি গাছ কাটা হচ্ছে। এছাড়া সার্কিট হাউস সম্প্রসারণে আরও ৫২টি গাছ কাটা হবে।
রাজশাহীর ইয়ুথ ফোরামের সদস্য সচিব ও পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ সংহতির সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহীর চরম আবহাওয়াকে স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন সবুজ বেষ্টনী ও প্রচুর জলাধার। কিন্তু উন্নয়নের নামে এখানে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর বারবার আঘাত হানছে। এ ধরনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং প্রাণিকূলের আবাসস্থল ধ্বংস করছে। গাছ কেটে বা জলাধার ভরাট করে কোনো উন্নয়ন আমরা চাই না।’
রাজশাহী সার্কিট হাউসের সম্প্রসারণ প্রকল্পে ছয়তলা ভবন, চারতলা ব্যারাক ও একতলা কিচেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অনুরোধে এখনও সেখানে গাছ কাটার কাজ শুরু হয়নি।
অপরদিকে, ওয়াসা ৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার ‘পানি শোধনাগার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২৬ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন বসাতে সওজ বিভাগের জায়গায় গাছ কাটতে হচ্ছে। কাশিয়াডাঙ্গা থেকে পশ্চিমের বিভিন্ন এলাকায় ৩০৬টি গাছ কেটে সওজে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১২টি গাছ নিলামের আগে কেটে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ৮৪টি গাছ কাটার কাজ চলছে।
সচেতন নগরবাসী এমএ কাইউম বলেন, ‘রাজশাহী গোদাগাড়ি সড়কের গাছের ছায়া পথচারী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য স্বস্তিদায়ক ছিল। এসব বৃক্ষ নিধনের ফলে সড়ক ফাঁকা হয়ে গেছে, যা ঠিক নয়।’
সওজ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘যেখানে জায়গা কম, সেখানে পাইপলাইন বসানোর জন্য গাছ কাটতে হচ্ছে। তবে এখনো ২২২টি গাছ রক্ষার সুযোগ আছে।’
রামেবির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহা. জাওয়াদুল হক বলেন, ‘দরপত্র ছাড়া অবৈধভাবে গাছ কাটার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ দ্রুত করতে কিছু গাছ কাটা প্রয়োজন। ৪৯ শতাংশ গ্রিন জোন রাখা হবে এবং দ্বিগুণ পরিমাণে নতুন গাছ লাগানো হবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন। সেখানে পরিবেশকর্মী, গবেষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন এবং প্রকল্পের নামে সহস্রাধিক গাছ কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন।