আর্থিক বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনবহির্ভূত অভিযোগ পেলেই দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। কমিশন সচিব মো. মাহবুব হোসেন এই মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও ব্যাংকটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের পর দুদক সচিব সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও ব্যাংকটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দুদকে।
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘পিকে হালদারে অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল হককে গত বছর দুদক রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে তিনি বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী দিয়েছেন।’
রাশেদুল হকের জবানবন্দীর বিষয়ে কমিশন সচিব বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল ১৬৪ ধারায় আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন এবং সেখানে দুটো নাম বেশি এসেছে যারা লিজিং লুটের নেপথ্যে ছিলেন। তাদের একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নিবার্হী পরিচালক শাহ আলম এবং ডেপুটি গভর্নর এস. কে সুর চৌধুরী।’
দুদক সচিব বলেন, ‘রাশেদুল হকের জবানবন্দীতে তাদের নাম আসায় দুদক তাদের দুজনকে আজ তলব করেছে। সেখানে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। পরবর্তীতে তাদের বক্তব্যে সঙ্গে তথ্য উপাত্ত মিলিয়ে দেখবেন এবং সেভাবেই আইনগতভাবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’
পিকে হালদার সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিতে গিযে দুদক সচিব বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের অর্থ আত্নসাতের ঘটনায় ২২টি এবং এফএএস ফাইন্যান্সের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১২টি সর্বমোট ৩৪টি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১২ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ জন আসামী আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।’
সম্পদ ক্রোকের বিষয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ ফ্রিজ ও ক্রোক করা হয়েছে। ৬৪ জন ব্যক্তি যেন বিদেশ যেতে না পারেন ইমিগ্রেশনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ৩৩ জনের অবৈধ সম্পদের নোটিশ জারী করা হয়েছে এবং যাচাই চলমান রয়েছে।’
লিজিং কোম্পানীগুলোর অনেক অনিয়মের অভিযোগ। কেবল পি কে হালদার সংশ্লিস্টরাই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে খবর এসেছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশন সচিব বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোক বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানই হোক যদি আইনবহির্ভূত কোনো কিছু করে দুদক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’
১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে রাশেদুল হক বলেছেন, তিনি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এমডি থাকাকালে পি কে হালদারের নির্দেশে প্রতি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিএফআইএম এর সাবেক জিএম এবং তৎপরবর্তী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে প্রদান করতেন। আর পি কে হালদারের ক্ষমতার উৎস ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর। তার মাধ্যমেই পি কে হালদার বিভিন্ন অনিয়মকে ম্যানেজ করতেন।
এ বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন অডিট টিম, যারা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং এফএএস ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেষ্টমেন্ট অডিট করছেন, তাদের দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারাও পরোক্ষভাবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সব কিছু করেছেন মর্মে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান।
সচিব বলেন, ‘এই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে অর্থ আত্মসাতে শাহ আলম এবং এস কে সুরের কোনো সম্পৃক্ততা আছে কিনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তদন্তে রেকর্ডভিত্তিক কিছু পাওয়া গেলে আইনগত সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’