
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
বর্ষার এই মৌসুমে তেঁতুলিয়া নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরার কথা থাকলেও বাস্তবে চিত্রটি ভিন্ন। নদীতে এখন বড় ইলিশের দেখা মিলছে না বললেই চলে। যে ইলিশ ধরা পড়ছে, তা আকারে একেবারেই ছোট ঝাটকা বলা চলে।
বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর জেলে হাবিবুর রহমান ও রহমান মাঝি জানান, সারা দিন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জাল টেনেও সন্ধ্যা পর্যন্ত পেলাম মাত্র ১২টি ঝাটকা। যার সর্বোচ্চ ওজন দেড় কেজি হতে পারে।
বাজারে ঝাটকার দাম প্রতি কেজি সাড়ে ৫০০ টাকা হলেও দাদনদার মহাজনরা কিনছেন সাড়ে ৪০০ টাকায়। এতে জেলেদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
দুইজন মানুষ সারাদিন ইঞ্জিনচালিত নৌকা চালিয়ে ৩ লিটার তেল খরচ করে কীই-বা থাকল হাতে? আক্ষেপ করে বলেন তারা।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাউফলে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৭ হাজার ৪০০ জন। এর মধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি ইলিশ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের বেশিরভাগই তেঁতুলিয়া নদীর ওপর নির্ভরশীল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীতে জেলেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না। ১৫টি নৌকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাত্র ৮টিতে ইলিশ ধরা পড়েছে—তাও বেশিরভাগই ঝাটকা। একটি নৌকায় মাত্র ৯০০ গ্রাম ওজনের একটি বড় ইলিশ মিলেছে, অন্যগুলো সবই ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা, একশো থেকে দেড়শো গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশ।
তেঁতুলিয়া নদীতে দীর্ঘ ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে মাছ ধরছেন ৫৫ বছর বয়সী জেলে ছদর উদ্দিন। তিনি বলেন, এক সময় এই নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলতো, তখন জীবন চলতো স্বচ্ছলভাবে। এখন ৮-১০ বছর ধরে নদীতে ইলিশের আকাল চলছে। জেলেরা দুর্দিনে রয়েছে।
আরেক জেলে মনির গাজী জানান, আগে খরস্রোতা তেঁতুলিয়া নদীতে চর পড়ে গভীরতা কমে গেছে। সেই সুযোগে প্রভাবশালী একটি মহল নদীর বুকে ঝাউ পেতে মাছ শিকার করছে। ঝাউয়ের কারণে ওই জায়গায় চর জেগে উঠছে, ফলে নদীর নব্যতা নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে ইলিশের চলাচলে।
উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোতাহার মাতুব্বর বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ নদীতে মাছ নেই। এর প্রধান কারণ হলো কিছু অসাধু জেলে, যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেহুন্দি, কারেন্ট ও বেরজাল দিয়ে ঝাটকা, রেণুপোনা ও চাপিলা ধরছে। এতে করে ইলিশের বংশবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় সাগর থেকে ইলিশ নদীমুখী হচ্ছে না। তাই নদীতে ইলিশের পরিমাণ কমে গেছে। নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
এদিকে, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার দাবি করেন, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে করে জেলেরা ইলিশ পাচ্ছেন। তবে কেউ কেউ না পেলেও তা একেবারে ‘ইলিশ নেই’ বলা ঠিক হবে না।