আমার কাগজ ডেস্ক
নকশা মেনে করলেও একটি ভবনে এত রেস্তোরাঁ মেনে নেওয়া যায় না। রেস্তোরাঁ করা মানেই বাণিজ্যিক রান্নাঘর করতে হবে। এটা বাসাবাড়ির রান্নাঘরের মতো নয়। এখানে প্রচণ্ড চাপে রান্না করা হয়। একটি বাণিজ্যিক ভবনে দু-একটা রেস্তোরাঁ থাকতে পারে। একটি রেস্তোরাঁ, কফিশপ– এগুলো নকশাতে থাকে। এর মানে এই নয়, পুরো ভবনকে রেস্তোরাঁ দিয়ে ভরে ফেলা হবে। ভবনজুড়ে রেস্তোরাঁ এটা এখন একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে। এর সূত্রপাত সম্ভবত রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সাতমসজিদ রোডের গাউসিয়া টুইন পিক ভবনে।
আমার প্রতিষ্ঠান ভিসতারা আর্কিটেক্টসের নকশা করা এই ভবনে এখন প্রায় ৩৫টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। প্রতিনিয়ত ভবনটি নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা ও অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে আমার অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে দেদার ব্যবসা। জমির মালিক ও ডেভেলপারকে বারবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। অর্থের কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিষ্ফল হচ্ছে।
ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে, তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কী করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! এভাবে অতিলোভে রাজধানীর ভবনগুলোকে মালিক ও ডেভেলপাররা রেস্তোরাঁ দিয়ে ভরে ফেলছেন। এতে ভবনগুলো সাক্ষাৎ কসাইখানা হয়ে উঠছে। মানুষের সুস্থ বিনোদন, নাটক, খেলাধুলা, সিনেমা দেখা দিন দিন লুপ্ত হচ্ছে। এখন নগরবাসীর সময় কাটানোর মূল বিষয় ‘খানাপিনা’। ফলে বনানী, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, বেইলি রোডের ভবন অনুমোদনহীন রেস্তোরাঁয় ভরে গেছে; যা নিয়ে অনেক দিন থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। কিন্তু ভবন মালিক এবং আবাসন ব্যবসায়ীদের মুনাফার অতিলোভ ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তারা এই লোভ থেকে বেরিয়ে না এসে রাজউকসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করলে সমস্যার সমাধান হবে না।
বেইলি রোডের ঘটনা একটি সতর্কবার্তা। এমন বাণিজ্যিক ভবনে দুটি সিঁড়ি থাকতে হবে। বেইলি রোডের ভবনটির ছিল মাত্র একটি সিঁড়ি; তাও খোলা। আগুন ও ধোঁয়া থেকে বাঁচতে বের হওয়ার জরুরি পথ (সিঁড়ি) খোলা রাখা হয় না। এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন আগুন-ধোঁয়া ঢুকতে না পারে। কিন্তু এখনকার বহুতল ভবনগুলোর সিঁড়িতে সেই সুযোগ রাখা হয় না।
নকশা ও অনুমোদন নেওয়ার সময় সব ঠিক রাখা হয়। সঠিক নিয়ম মেনে অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণের সময় নিয়মের বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ‘অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে’ রূপান্তর করা হয়। ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থার অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়, যত্রতত্র রাখা হয় গ্যাস সিলিন্ডার।