আমার কাগজ ডেস্ক
বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী জোটগুলো সরকার পতন আন্দোলনে যুগপৎ এক দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা দেবে আজ বুধবার (১২ জুলাই)। নিজ দল ও জোটের ব্যানারে রাজধানীতে সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যুগপৎভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি এবং ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা যৌথ রূপরেখাও’ ঘোষণা করা হবে।
জানা গেছে, আজ দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বড় সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেবে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘোষণা দেবেন। সপ্তাহজুড়ে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এই একদফা, কর্মসূচি ও ‘যৌথ রূপরেখা’ চূড়ান্ত করেছে বিএনপি।
তবে, এ যাত্রায় জামায়াতে ইসলামী নেই। দলটি এই মুহূর্তে আগামী ১৫ জুলাই সিলেটের জনসভার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। এরপর অন্যান্য বিভাগ ও মহানগরেও এককভাবে সমাবেশ করবে জামায়াত।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের মধ্যেই যুগপৎ আন্দোলন শুরুর চিন্তা বিএনপির হাইকমান্ডের। ফলে আগামী শুক্রবার ঢাকাজুড়ে মানববন্ধন বা মানবপ্রাচীর অথবা বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে একদফার আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ইইউসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দলটি এই বার্তা দিতে চায় যে, দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি করে আসা ৩৬টি রাজনৈতিক দল এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
কে কোথায় কীভাবে দেবেন ঘোষণা
সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন স্লোগানে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের এক দফা যৌথ ষোষণার জন্য সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। ১২ জুলাই বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার বিকাল ৫টায় রাজধানীর পূর্বপান্থপথের এফডিসি সংলগ্ন এলডিপির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। সংবাদ সম্মেলনে এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম ও মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ উপস্থিত থাকবেন।
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে চূড়ান্ত ও অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণার জন্য সংবাদ সম্মেলন করবে ১২ দলীয় জোট। বিকেল ৪টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নসরুল হামিদ হলে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কসংলগ্ন আলরাজী কমপ্লেক্সের সামনে, এলডিপি তেজগাঁওয়ে এফডিসিসংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে, গণফোরাম-বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) আরামবাগে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে, এনডিপি বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে, লেবার পার্টি নয়াপল্টনে মসজিদ গলিতে দলীয় কার্যালয়ে, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) জাতীয় প্রেস ক্লাবে, গণঅধিকার পরিষদ (নূরুল হক নূর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকেল ৩টায় এই ঘোষণা দেবে।
একদফায় থাকছে, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা-গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েসি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট ও দলসমূহ যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তোলা ও সফল করা।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার বাইরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের মধ্য দিয়ে মাঠে গড়ায় তাদের আন্দোলন। এখন পর্যন্ত গণমিছিল, গণ-অবস্থান, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বিএনপির এই মুহূর্তে ঘোষিত কিছু কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জুলাই খুলনায় ও ২২ জুলাই ঢাকায় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি চার সংগঠনেরও কর্মসূচি রয়েছে।