আমার কাগজ প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের টিআইবি বিএনপির দালাল। তাদের প্রত্যেকটা কথা ও বক্তব্য একপেষে। একটা পক্ষের ওকালতি করে। সরকারের বিপক্ষে যা খুশি বলে। যে ভাষায় বিএনপি কথা বলে, তারাও সে ভাষায় কথা বলে। এ জন্যই বলছি, তারা বিএনপির দালাল।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইতিহাস থেকে উপলব্ধি করেছি, টিআইবি সব সময় আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিল। সব সময় বিএনপির পক্ষে কাজ করেছে তারা। গবেষণা নিয়ে কাজ করে তারা। কিন্তু তাদের গবেষণায় আমরা নিরপেক্ষতা খোঁজে পাচ্ছি না। টিআইবি বলেছিল, পদ্মা সেতু অসম্ভব। সিপিডিও একই মন্তব্য করেছিল। কিন্তু বাস্তবতা কী দেশবাসী দেখেছে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দি; কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাঈদ খোকন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৪১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি দাবি করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখাতে নিজ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করলেও বেশিরভাগ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানায় সংস্থাটি।
টিআইবি জানিয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। ভোটের দিন সারাদেশে অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ছিল না। প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের এজেন্টদের হুমকির মাধ্যমে কেন্দ্রে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখা হয়।
৭ জানুয়ারির ভোটের দিন শেষ ঘণ্টায় ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার বিষয়টি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিবেদিত নাগরিক সমাজ সংস্থাটির প্রতিবেদন প্রকাশের অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।
টিআইবি জানায়, নির্বাচনে শেষের এক ঘণ্টায় ১৫.৪৩ শতাংশ ভোটসহ মোট ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ ১৫টি নিবন্ধিত দলের অনুপস্থিতি ও তাদের নির্বাচন বর্জনের কারণে বেশিরভাগ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। অন্তত ২৪১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।
সেখানে আরও বলা হয়, ভোটের দিন স্বল্প ভোটার আগমন এবং ডামি লাইন তৈরি করে বিভিন্ন আসনে অন্যদলের প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়। ভোটের আগে ব্যালটে সিল মারা, ভোট চলাকালে প্রকাশ্যে সিল মারাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রার্থীদের দেওয়া এমন তথ্য ওঠে এসেছে টিআইবির প্রতিবেদনে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দুই বড় দলের বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানের কারণে অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচন হয়নি এবং এ বিপরীতমুখী ও অনড় অবস্থানকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লড়াইয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জিম্মিদশা প্রকটতর হয়েছে। ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার কৌশল বাস্তবায়নের একতরফা নির্বাচন সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হয়েছে, যার আইনগত বৈধতা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়তো হবে না বা হলেও টিকবে না। তবে এ সাফল্য রাজনৈতিক শুদ্ধাচার, গণতান্ত্রিক ও নৈতিকতার মানদণ্ডে চিরকাল প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপিসহ ১৫টি নিবন্ধিত দল এই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২৩ আসনে জাতীয় পার্টি ১১ আসনে ও বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়লাভ করে।