ফেনী প্রতিনিধি:
ফেনীতে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে তারা মানববন্ধন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী সদর উপজেলার বিরলী গ্রামের সানজিদা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় আক্রামপুর গ্রামের আবুল বশরের সঙ্গে। বিয়ের দেড় মাসের মাথায় ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন সানজিদা।
ঘটনার পরদিন ২৮ ডিসেম্বর গৃহবধূর মা মোরশেদা বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। ৭ জানুয়ারি পুলিশ বশরকে গ্রেফতার করে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে, গৃহবধূর মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মানবাধিকার কর্মীরা। এক পর্যায়ে গৃহবধূর ফেসবুক আইডি থেকে বেরিয়ে আসে বিয়ের আগে তার প্রেমের বিষয়টি।
সানজিদার ফেসবুকের থেকে পাওয়া বিভিন্ন মেসেজ, কমেন্ট ও নানা সূত্র উল্লেখ করে আক্রামপুরের বাসিন্দা মো. ইয়াছিন জানান, সানজিদার প্রেমের সম্পর্ক ছিহ্ন করে বশরের সঙ্গে বিয়ে দেয় তার পরিবার। ২৭ ডিসেম্বর সানজিদার কথিত প্রেমিক খালাতো ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। তার আত্মহত্যার পেছনে স্বামীর বাড়ির কারও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
আবুল বশরের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিয়ের কয়েকদিন পরই আমরা তার প্রেমের সম্পর্কের কথা লোকমুখে শুনেছি। কিন্তু সেটাতে আমরা কান দেইনি। বিয়ের আগে অনেকেই প্রেম করে আবার তা ভুলেও যায়। কিন্তু বিরহের বিষণ্নতা সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করবে এমনটি আমরা ভাবতে পারিনি। সে আত্মহত্যা করে আমাদের পরিবারকে বিপদে ফেলে গেছে। এতে আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমার ভাইসহ আসামি হওয়া নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি চাই। একই সঙ্গে বিয়ের আগে সানজিদা যার সঙ্গে প্রেম করেছে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবি জানাচ্ছি।
মামলার বাদী মোরশেদা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর আমার মেয়েকে তারা নির্যাতন করেছে। তাই সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, গৃহবধূর আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার স্বামীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করি মূল ঘটনা বের হয়ে আসবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ফেনী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, আক্রামপুরে গৃহবধূর আত্মহত্যার বিষয়ে দু’পক্ষ পরস্পরকে দোষারোপ করছে। উভয়পক্ষ অপর পক্ষের শাস্তি দাবি করে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এতে করে প্রকৃত ঘটনা বুঝে ওঠা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এরপরও আমরা চাই প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত হোক এবং শাস্তি হোক।