আমার কাগজ ডেস্ক
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সোমবার লন্ডনে ব্রিটেনের মন্ত্রিসভার এক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন। এদিকে পশ্চিম তীরে তিন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে ছদ্মবেশী ইসরাইলি সেনারা।
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়া প্রশ্নে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সোমবারের বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতমুখর পরিস্থিতি, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবির ন্যায্যতা, নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ইসরাইলের ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। মন্ত্রী জানান, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে জাতিসংঘেও ভূমিকা রাখবে ব্রিটেন ও তার মিত্ররা। অনুষ্ঠানে ক্যামেরন বলেন, আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেব এবং এ ইস্যুকে আরও গতিশীল করতে জাতিসংঘেও কাজ করব। আমাদের মিত্ররা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি। কারণ, যদি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতিকে নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে গত কয়েক দশকের অপেক্ষা শেষ হওয়ার পথ সুগম হবে। প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালে আরব লীগের সম্মেলনে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এবং সেই রাষ্ট্রের একমাত্র বৈধ সরকার হিসেবে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে স্বীকৃতি দেয় আরব লীগ। ১৯৬৬ সাল থেকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে আন্দোলন করে আসা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সম্মিলিত জোট ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) শুরুর দিকে ইসরাইল রাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয়; তবে ১৯৮২ সালে ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ বা ইসরাইলের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও মেনে নেয় পিএ। এই প্রক্রিয়া অবশ্য শুরু হয় গত শতকের ষাটের দশক থেকেই। ১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুই রাষ্ট্রের সীমানাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল কখনো দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয়নি, উপরন্তু প্রায় নিয়মিত প্রস্তাবিত সীমানা লঙ্ঘন করে নিজেদের রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করে চলেছে।
সোমবারের বক্তব্যে ক্যামেরন বলেন, নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফিলিস্তিনের জনগণ যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা ইতিমধ্যে পরিণত হয়েছে। এখন একে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া তাদের এই আন্দোলন ন্যায্য এবং ফিলিস্তিনের জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে সমর্থন দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর দীর্ঘ ঐতিহ্য আমাদের রয়েছে। তাছাড়া আরও কারণ রয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কেবল একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা নয়; বরং এটি মধ্যপ্রাচ্য থেকে সন্ত্রাসবাদেরও বিদায় ঘণ্টা বাজাবে। আমাদের স্বীকৃতি দেওয়ার একটি কারণ হলো আমরা ঐ অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসবাদ স্থায়ীভাবে নির্মূল করতে চাই। এই অঞ্চলটিকে আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা প্রয়োজন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ব্যাপারটি সহজ করবে। বর্তমানে সেখানে যে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে, অস্থায়ী বিরতি তার কোনো সমাধান নয়। সেখানে প্রয়োজন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। বক্তব্যে ইসরাইলেরও কঠোর সমালোচনা করেন ক্যামেরন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইল হয়তো তার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছে, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পেরেছে, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনীও গড়ে তুলেছে; কিন্তু নাগরিকদের নিরাপত্তা তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা এবং ইসরাইলের গত কয়েক দশকের ইতিহাস মূলত এই ব্যর্থতার ইতিহাস। বর্তমানে গাজায় মানবিক বিরতির আলোচনা চলছে। আমরা মনে করি, এই আলোচনা সফল হওয়ার ওপর আসলে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন অনেকাংশ নির্ভর করছে।
এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ছদ্মবেশে তিন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা। মঙ্গলবার পশ্চিম তীরের একটি হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর দাবি, নিহতদের একজন একটি আসন্ন হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত এবং অপর দুজন ইসরাইলে সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িত ছিল।
অনলাইনে প্রকাশ করা সিসিটিভি ফুটেজে প্রায় ডজনখানেক ছদ্মবেশী সেনাকে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে জেনিনের ইবনে সিনা হাসপাতালের একটি করিডোর দিয়ে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে তিন জন নারী পোশাক এবং দুজন মেডিক্যাল স্টাফের পোশাক পরিধান করা ছিলেন। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে ফুটেজের সত্যতা যাচাই করা যায়নি।