আমার কাগজ প্রতিবেদক
কারামুক্তির পর থেকে গুলশানের বাসায় থাকছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রুটিন চেকআপের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টকে দেখিয়েছেন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শে আপাতত বাসায় থাকবেন। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি আবার চিকিৎসককে দেখাবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, শিগগির গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অফিস করতে পারেন মির্জা ফখরুল। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজকালের মধ্যে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন। এ ছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে পারেন তিনি। দু-এক দিনের মধ্যে শহীদ দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, দ্বাদশ সংসদ বাতিল এবং একদফা দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ছয় দিনের লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব মহানগরে এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি জেলা শহরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। এ ছাড়া সব উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করা হবে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি। এরপর একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি শেষে রমজানের আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদসহ একদফা দাবিতে ঢাকায় সমাবেশের চিন্তা রয়েছে তাদের। বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হলেও ওই কর্মসূচি দিয়ে মাঠের রাজনীতিতে নামতে পারেন মির্জা ফখরুল।
এদিকে কারামুক্তির পর শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন মির্জা ফখরুল। বিবৃতিতে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রাউজানে জুমার নামাজ পড়তে এসে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হামলায় মোহাম্মদ মুছা নামে ওমান প্রবাসী বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
জানা গেছে, চিকিৎসার ফলোআপের জন্য আগামী ৭ মার্চ সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর যেতে পারেন মির্জা ফখরুল। বিএনপি মহাসচিবের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা জানান, সিঙ্গাপুরে মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়াও তার স্ত্রী রাহাত আর বেগমও চিকিৎসা নেবেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেন বিএনপি মহাসচিব। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন ফখরুল। এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে ২ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন তারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি মহাসচিব শনিবার একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টকে দেখিয়েছেন। শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ আছেন। তবে কারাগারে থাকার সময় উনার কয়েক কেজি ওজন কমে গেছে। এর কারণ খুঁজে বের করাসহ রুটিন চেকআপের জন্য চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার তিনি আবার চিকিৎসককে দেখাবেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, কারামুক্তির পর রুটিন চেকআপের অংশ হিসেবে বিএনপি মহাসচিব চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থাকবেন।
ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন মাস কারাগারে কাটানোর পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান মির্জা ফখরুল ইসলাম। কারামুক্তির পর নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। ইনশাআল্লাহ এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় জানান তিনি।
কারামুক্তির পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল। সেখানে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মির্জা ফখরুল। পরদিন শুক্রবার সদ্য কারামুক্ত মির্জা ফখরুলের বাসায় যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আব্দুল মঈন খান। তারা বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ওইদিন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাও মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে কুশল বিনিময় করেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। দলটির অভিযোগ, পুলিশ হামলা চালিয়ে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারা দেশে হরতালের ডাক দেন মির্জা ফখরুল। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।