
ছবিতে সাবেক সংসদ সদস্যের সাথে জুম্মন (লাল গোল চিহ্নিত)
বাজিতপুর প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে পুলিশের দুই উপপরিদর্শক ও তিন কনস্টেবলকে পিটিয়ে আহত করে চার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি যুবলীগ ক্যাডার মো. জুম্মন মিয়া (৪১) হাতকড়াসহ পালিয়ে গেছেন। গত বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে বাজিতপুর থানা সংলগ্ন পূর্ব পৈলনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ রাতেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করে বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আদালতে সোপর্দ করেছে।
ঘটনার পর বাজিতপুর থানার উপপরিদর্শক মো. কাদের খান জুয়েল বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ‘পুলিশের সরকারি কাজে বাধা ও বল প্রয়োগ করে আসামি ছিনতাইয়ের’ অভিযোগ আনা হলেও হাতকড়াসহ আসামির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, এলাকার এক রাজনৈতিক নেতার মধ্যস্থতায় হাতকড়ার চাবি পাঠিয়ে বুধবার রাতেই হাতকড়াটি ‘উদ্ধার’ করা হয়। যদিও আসামি মো. জুম্মন মিয়াকে পুলিশ এখনো আটক করতে পারেনি। এ বিষয়ে আলাপকালে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা হাতকড়া ছিনতাই ও উদ্ধারের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন।
বাজিতপুর থানার ওসি মো. মুরাদ হোসেন বলেন, ‘হ্যান্ডকাফের খবর কেউ বলেনি। আমার এ ব্যাপারে জানা নেই। কোনো অফিসারও বলেনি।’
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অভিযোগে যুবলীগ ক্যাডার মো. জুম্মন মিয়ার বিরুদ্ধে বাজিতপুর থানায় দুটিসহ অন্তত চারটি মামলা রয়েছে।
এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে তিনি এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যেই অবস্থান করছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার রাতে পুলিশ জুম্মন মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। তিনি বাড়ির পাশের একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। এসআই মো. কাদের খান জুয়েল, এসআই শ্যামল চন্দ্র দেবনাথ ও তিনজন কনস্টেবল সেখানে গিয়ে তার হাতে হাতকড়া পরান।
এ সময় জুম্মনের চিৎকারে মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে শ’খানেক লোক জড়ো হয়। তারা রামদা, লোহার রড ও দেশি অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে দোকানের আলো নিভিয়ে দিলে জুম্মন হাতকড়াসহ পালিয়ে যান। হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
খবর পেয়ে বাজিতপুর সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে পুলিশ যৌথ বাহিনীর সহায়তায় রাতে রিকশাচালক কাজল মিয়া, দিনমজুর জুয়েল মিয়া ও ফারুক নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার নতুন মামলায় তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের জামিন না দিয়ে জেলহাজতে পাঠান।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বাজিতপুর সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘রাতভর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ “ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ।