জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবিতে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ডাকে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা কার্যত ‘অচল’। শুক্রবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে পণ্য ও যাত্রীবাহী যান।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে পনেরো টাকা এবং বৃহস্পতিবার এলপি গ্যাসের দাম ১২ কেজির সিলিন্ডার প্রতি ৫৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বুধবার।
তেলের দাম কোনো আলোচনা ছাড়াই একতরফা বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ অনেক বাড়বে দাবি করে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয় ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি।
কেন্দ্রীয়ভাবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘটের কোন সিদ্ধান্ত না নিলেও জেলা পর্যায় থেকে মালিক শ্রমিকেরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় ঢাকাগামী যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে রাজধানীর ভেতরের বাস চলাচল।
চট্টগ্রাম থেকে বাস-ট্রাক-লরি চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে অটোরিকশা চলাচল করছে।
বরিশালের রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে আজ ভোর থেকে বাস চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে না এবং অলস বসে আছে পণ্য পরিবহনের ট্রাক লরিও।
খুলনা থেকে যে ২২টি রুটে বাস চলাচল করে সেগুলোতেও আজ ভোর থেকে বাস চলাচল বন্ধ আছে।
বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলাগুলোতেও স্থবির অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে।
শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, এ বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো ধরনের যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের বিকল্প ব্যবস্থাপনায় গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে করে তাদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
জেলায় কোনো ধরনের ট্রাক চলাচল না করায় পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান সোহেল বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা জেলায় ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছি। আমাদের দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি খো. ইকবাল হোসেন বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে আমরা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। এমন সময় সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের বিস্মিত করেছে। তাই আমরা জেলায় সর্বত্র বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি।
এ দিকে শুক্রবার ভোর থেকে মোংলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, মোংলা-খুলনা, মোংলা-বাগেরহাট-বরিশালসহ সব রুটে বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে মালিক-শ্রমিকেরা।
বন্ধ রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলও। মোংলা বন্দরের জেটির সামনে ও দিগরাজ শিল্প এলাকার বিভিন্ন মিল-কলকারখানার সামনে সব সময় শত শত ট্রাকের জটিল থাকলেও শুক্রবার সে সব জায়গা একেবারে ফাঁকা রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে তারা পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছেন।
ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দর জেটি, ইপিজেড ও শিল্প এলাকার তেল, গ্যাস, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ফ্যাক্টরির পণ্য এবং কাঁচামাল পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
সকাল থেকে নড়াইল-ভাটিয়াপাড়া-ঢাকাসহ আন্তঃজেলা সড়ক ও অভ্যন্তরীণ সকল সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, নড়াইল-ঢাকা, নড়াইল-যশোর, নড়াইল-খুলনা, নড়াইল-মাগুরা, নড়াইল-গড়েরঘাট, নড়াইল-নওয়াপাড়া, নড়াইল-কালিয়াসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সরদার আলমগীর হোসেন জানান, হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ ছাড়া ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে যাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তেলের মূল্য কমানো না হলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
গাজীপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও চাঁদপুরসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকেও একই খবর পাওয়া গেছে।