ইবি প্রতিনিধি
পরিশ্রম আর অধ্যবসায় যে কখনো বৃথা যায় না তা আরেকবার প্রমাণ করে দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিমুল হাসান (প্রান্ত)। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই সফলতাকে কুড়িয়েছেন নিজের ঝুলিতে, বনে গেছেন শত তরুণের আদর্শ।
প্রান্ত কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন বিশ্বের অন্যতম প্রিমিয়ার কোম্পানী উইনিং মুভ ইভেন্টস এবং ইনটুফিউচারের ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড- ২০২৩।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মোহনপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ ও আফরোজা খাতুন দম্পত্তির ছোট সন্তান প্রান্ত। মা-বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে বড় হয়ে একদিন সরকারি চাকরিজীবী হবে। কিন্তু প্রান্ত ছিলেন স্বাধীনচেতা, স্বপ্ন দেখতেন ভিন্ন কিছু করার। আর সেই প্রবল ইচ্ছেশক্তি থেকে আজ ছাত্রজীবনেই হয়েছেন একজন সফল আইটি উদ্যোক্তা।
বর্তমানে প্রান্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে লোকপ্রশাসন বিভাগে অধ্যায়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছেন একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। যা থেকে তার প্রতিমাসে আয় হচ্ছে ৩-৪ হাজার ডলার; বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।
ফলে তরুণ প্রান্ত কয়েক বছরেই বনে গিয়েছেন কোটিপতি।
তবে তার যাত্রার শুরুটা এতোটা মসৃণ ছিল না। পদে পদে ছিল নানান প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছেশক্তির কাছে কোনো প্রতিবন্ধকতাই টিকতে পারেনি শেষ পর্যন্ত।
২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন প্রান্ত। ২০১৯ সাল থেকে নিজে কিছু করার চেষ্টায় বন্ধু শামীম রেজার হাত ধরে ফ্রিলান্সিং পেশায় আসেন তিনি। তারপর নিজের কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের ফল হিসেবে আজকের এই জায়গায় এসেছেন তিনি।
প্রান্ত এখন নিজের পাশাপাশি কাজ করছেন নিজ এলাকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়েও। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আগ্রহী তরুণ তরুণীদেরকে দিচ্ছেন বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ। গড়ে তুলেছেন ‘প্রান্ত আইটি ইনিস্টিটিউট’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে কর্মসংস্থান করেছেন ১৫ জনের অধিক বেকার তরুণের।
প্রতিষ্ঠানটি মূলত লিড জেনারেশন, ডাটা এন্ট্রি, অ্যামাজন ড্রপ সিপিং, ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো একাধিক সার্ভিস প্রদান করে থাকে। যা থেকে প্রতিমাসে উপার্জিত আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ সমাজের অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ব্যয় করা হয়।
বর্তমানে প্রান্ত আইটি ইনস্টিটিউটের ফাউন্ডার এবং সিইও ছাড়াও দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলোজি পার্ক যশোরে এ.এন স্যালুশনের চিফ অপারেটিং অফিসার ও ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেইনার হিসাবে। এছাড়াও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কর্মরত এবং একটি দৈনিক পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
প্রান্ত জানান, মাত্র ১৮ ডলার উপার্জন দিয়ে শুরু করেছিলেন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার। পাঁচ বছর পর এখন মাসে গড় আয় করেন ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার। ৪৭টি দেশের এক হাজারের অধিক বায়ারের সঙ্গে এ যাবত কাজ করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ উপার্জন ছিল ১০১৩৭ ডলার; যা ১০ লাখ টাকারও অধিক।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকার জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্টের বিকল্প নেই। তবে নতুন কিছু শেখার জন্য সঠিক নির্দেশনা ও অধ্যাবসায় অনস্বীকার্য। একটি ডেভেলপড স্কিল ভবিষ্যতের নিরাপত্তা দেয়। বর্তমান পেক্ষাপটে বেশিরভাগ ফ্রিলান্সার দেখি হতাশায় ভোগে। কিছুদিন কাজ থাকে আবার কিছুদিন কাজ থাকে না। এক্ষেত্রে আমার ব্যাপারটা অন্যরকম। একটানা ২ বছর কাজ বাদে একটা দিনও যায় নাই। এটাই আমার কর্মদক্ষতা।
প্রান্ত আরও বলেন, যেকোনো কাজ করার আগে ৪ বার ভাবি তারপর কাজিটি করি। আর এটাই আমার সফলতার চাবিকাঠি। ভবিষ্যতে পুঁথিগত বিদ্যার কোনো মূল্যায়ন থাকবে না, শুধু থাকবে কর্মদক্ষতার। যার কর্মদক্ষতা যতবেশি তার চাহিদা তত বেশি থাকবে। তাই পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মদক্ষতা অর্জন জরুরি।
বেকার তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমানে চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। হাজার হাজার বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনলাইনে প্রচুর কাজ রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তাই চাকরির পেছনে না ঘুরে সঠিক পথে পরিশ্রম করে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, জীবনে স্বপ্ন পূরণ করাটা লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য পূরণ করাটা স্বপ্ন। প্রান্ত আইটি ইনস্টিটিউটে ১৫ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আশা রাখছি, আগামী এক বছরে ১৫ থেকে ৫০ জনের অধিক বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে আমার প্রতিষ্ঠানে।