আমার কাগজ প্রতিবেদক
গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থগিত হওয়া বিসিএসসহ অন্য চাকরির নিয়োগ ও পদোন্নতি পরীক্ষাগুলো এখনো শুরু করতে পারেনি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এর ফলে কয়েক লাখ চাকরিপ্রার্থী চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। পিএসসি পুরোপুরি সচল না হওয়ায় তাদের শঙ্কা আরও বাড়ছে।
এদিকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পর গত ৮ জুলাই থেকে অচল হয়ে পড়ে পিএসসি। এ ছাড়া সরকার বদলের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় চার মাসে কোনো বিসিএসের পরীক্ষা নেয়া হয়নি বা ফল প্রকাশ হয়নি। সব মিলে প্রায় চার মাস হতে চলল পিএসসির গতি নেই।
গত ৮ জুলাই পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিতসহ গত ১২ বছরে গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্ন কয়েকটি চক্র ফাঁস করেছে বলে সংবাদ প্রচার করে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। একই সময়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবিও তোলেন অনেকে। প্রচারিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পিএসসি। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ কমিশন পায়নি। অভিযোগ ওঠা ও তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময়ে কোনো বিসিএসের ফল প্রকাশ বা পরীক্ষা হয়নি। পরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।
পিএসসি সূত্র জানায়, এখন ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা স্থগিত আছে, ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার কার্যক্রম আটকে আছে। এ ছাড়া ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত আছে।
পিএসসি দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তিতে দুটি বিসিএসের পরীক্ষা স্থগিত করে। এই দুই বিসিএস হচ্ছে ৪৪ ও ৪৬তম বিসিএস। ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে আর ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। কবে শুরু হবে, সে তথ্য জানানো হয়নি।
৪৪তম বিসিএসের ভাইভা ও ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, নিয়োগকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে, সেই চাকরির কথাই যেন সবাই ভুলে গেছে। ৪৩-এর গেজেট আটকে আছে, ৪৪-এর ভাইভা আধাখেঁচড়া হয়ে আছে, ৪৫-এর লিখিত পরীক্ষার ফল ও ৪৬-এর লিখিত পরীক্ষার তারিখ হিমঘরে। নিয়োগ পরীক্ষাকে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে। আমরা কি পিএসসিকে নিয়ে হতাশার বৃত্ত থেকে বের হতে পারব না?
৪৪তম বিসিএসের আরেক ভাইভা প্রার্থী বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পিএসসির সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ৪৪তম বিসিএসের স্থগিত ভাইভা কবে নাগাদ শুরু হবে তার কোনো হদিস নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বেকাররা দিন দিন হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছি। পরীক্ষার শিডিউল না থাকায় স্বাভাবিক পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে। আমরা এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
পিএসসির নতুন চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেন, পিএসসি এখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কমিশনে সিদ্ধান্ত নিতে হলে ছয়জন সদস্য প্রয়োজন, তাহলে কোরাম পরিপূর্ণ হয়। আশা করছি, দ্রুত আরও অন্য সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে। তারপর কীভাবে দ্রুত পিএসসিকে গতিশীল করা যায় তা ঠিক করা হবে।
অন্যদিকে পিএসসি বলছে, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পর সরকারের পট পরিবর্তন—সব মিলে পিএসসিকে নতুন করে গতিশীল করতে কিছুটা সময় লাগবে। তারাও এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ছাড়া স্থগিত থাকা বিসিএস পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে পিএসসি। এ জন্য নতুন করে পরীক্ষার তারিখ দেয়া হয়নি।