
আমার কাগজ ডেস্ক
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় একদিনে কমপক্ষে ৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন খাদ্য সংকটের কারণে অনাহারে মারা গেছেন ২৯ জন। এই ঘটনাগুলোতে গাজার মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার ৮০০ জনের বেশি পৌঁছেছে।
গাজায় গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা আড়াই লাখের কাছাকাছি। চলমান সংঘাতের ফলে সেখানে চলমান মানবিক সংকট ও অনাহারের প্রকোপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
শুক্রবার (২৩ মে) আল জাজিরা ও বার্তাসংস্থা আনাদোলুর পৃথক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় চিকিৎসা সূত্রগুলো বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত কয়েক দিনে ২৯ জন শিশু ও বৃদ্ধ অনাহারে মারা গেছেন। হাজার হাজার মানুষ চরম খাদ্য সংকটে রয়েছেন এবং মৃত্যুর মুখে বসবাস করছেন।
আনাদোলুর প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫৩,৭৬২ জনে পৌঁছেছে। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে পৌঁছেছে ১০৭ জনের মরদেহ, এবং আহত হয়েছে ২৪৭ জন। তাছাড়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অনেক লাশ ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে, যেখানে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারছেন না।
গাজায় চলমান এই সংঘাত চলাকালীন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ১৮ মার্চ থেকে ফের আক্রমণ শুরু করে। তখন থেকে ৩ হাজার ৬১৩ জনকে হত্যা এবং ১০ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যত ভঙ্গ হয়ে গেছে।
এদিকে, গত বছরের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল। তদুপরি, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলাও চলমান রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা সতর্ক করেছেন, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটের কারণে অতি দ্রুত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অনাহারে মারা যাওয়ার ঘটনাগুলো গাজার সাধারণ মানুষের জীবনে সংকটের গভীরতা প্রকাশ করছে। চলমান বিক্ষোভ, বিমান হামলা ও স্থল আক্রমণের কারণে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে, তবে সংঘাত অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্দশা বৃদ্ধি পাচ্ছে।